কক্সবাজার রেল প্রকল্প থেকে বাদ পড়েছে রামু-ঘুনধুম অংশ। বিগত ২০১০ সালে দোহাজারী থেকে কক্সবাজার ও রামু থেকে মিয়ানমার সীমান্তবর্তী ঘুনধুম পর্যন্ত নতুন রেলপথ নির্মাণে প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়। সরকারের ফাস্ট ট্র্যাকভুক্ত এ প্রকল্পের ব্যয় নির্ধারণ করা হয় ১৮ হাজার ৩৪ কোটি টাকা। ইতোমধ্যে চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত অংশে রেলপথ নির্মাণের কাজ শেষ হয়েছে। আর প্রকল্পের রামু-কক্সবাজার অংশ আপাতত বাস্তবায়ন না করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। রামু-ঘুনধুম অংশ বাদ দিয়ে প্রকল্পটির উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) দ্বিতীয়বার সংশোধনের প্রস্তাব দিয়েছে প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটি (পিইসি)। এতে নির্মাণ ব্যয় ১১ হাজার ৩৬৩ কোটি টাকা নির্ধারণের প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রস্তাবটি অনুমোদন পেলে প্রকল্পের ব্যয় ৬ হাজার ৬৭০ কোটি টাকা কমে আসবে। একই সময়ে কক্সবাজার রেল প্রকল্পের মেয়াদ আরো এক বছর বাড়ানোর প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। এ প্রস্তাব অনুমোদন পেলে ২০২৫ সালের ৩০ জুন কক্সবাজার রেল প্রকল্প শেষ হবে। বাংলাদেশ রেলওয়ে সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (একনেক) নির্বাহী কমিটিতে দুই ধাপে বাস্তবায়নের পরিকল্পনা নিয়ে ২০১০ সালে দোহাজারী-কক্সবাজার রেলপথ নির্মাণ প্রকল্প অনুমোদিত হয়। প্রথম ধাপে দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত ১০০ দশমিক ৮৩ কিলোমিটার রেলপথ নির্মিত হওয়ার কথা ছিলো এবং তার নির্মাণকাজ এরই মধ্যে সম্পন্ন হয়েছে।
২০২৩ সাল থেকে এ রেলপথ ব্যবহার করে ঢাকা-কক্সবাজার রুটে ট্রেন পরিচালনাও শুরু হয়েছে। এ রেলপথ নির্মাণের প্রধান উদ্দেশ্য ছিল পর্যটন শহর কক্সবাজারকে রেলওয়ে নেটওয়ার্কে যুক্ত করা। সূত্র জানায়, দ্বিতীয় ধাপে রামু স্টেশন থেকে মিয়ানমার সীমান্তবর্তী ঘুনধুম পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণের পরিকল্পনা ছিল। এজন্য ২৮ দশমিক ৭২ কিলোমিটার রেলপথের পাশাপাশি কক্সবাজারের উখিয়া ও বান্দরবানের ঘুনধুমে দুটি স্টেশনও নির্মিত হওয়ার কথা ছিল। উদ্দেশ্য ছিল ট্রান্স এশিয়ান রেলওয়ে রুট-১-এ সংযুক্ত হওয়া। রুটটি ভারতের গেদে থেকে দর্শনা সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে ঈশ্বরদী-বঙ্গবন্ধু সেতু-জয়দেবপুর হয়ে টঙ্গী-আখাউড়া-চট্টগ্রাম-দোহাজারী-রামু হয়ে ঘুনধুম সীমান্ত মিয়ানমারে যাওয়ার কথা। রুটটিকে পূর্ণ রূপ দেয়ার জন্য বাংলাদেশ অংশে প্রায় ২৯ কিলোমিটার ও মিয়ানমারের অভ্যন্তরে দুই দেশের সরকারের প্রয়োজনীয় নতুন রেলপথ নির্মাণের পরিকল্পনা ছিল। তবে মিয়ানমারে বিদ্যমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি রুটটিকে অনিশ্চয়তার মধ্যে ফেলে দেয়। অদূর ভবিষ্যতে রুটটি কার্যকর হওয়ার সম্ভাবনা কমে আসায় আপাতত কক্সবাজার রেল প্রকল্প থেকে রামু-ঘুনধুম অংশ বাদ দেয়া হচ্ছে। প্রকল্পটির ডিপিপি সংশোধনীতেও বিষয়টির উল্লেখ করা হয়েছে। বর্তমান ডিপিপি অনুযায়ী প্রকল্প বাস্তবায়ন এলাকার আওতায় রয়েছে চট্টগ্রামের চন্দনাইশ, সাতকানিয়া, লোহাগাড়া, কক্সবাজারের চকরিয়া সদর, রামু, উখিয়া ও বান্দরবানের ঘুনধুম। দ্বিতীয়বার সংশোধনীর মাধ্যমে এখান থেকে কক্সবাজারের উখিয়া ও বান্দরবানের ঘুনধুম এলাকা বাদ দেয়া হয়েছে। সূত্র আরো জানায়, রেলওয়ের প্রকল্প থেকে রামু-ঘুনধুম অংশটি স্থগিত রাখা ছাড়াও প্রকল্পটির আরো ছয়টি অনুষঙ্গ সংশোধনের কারণে ব্যয় কমেছে। অনুষঙ্গগুলো হলো ভূমি অধিগ্রহণ ও পুনর্বাসন, মূল রেলপথ নির্মাণ, নতুন আরোপিত সিডি-ভ্যাট, পরামর্শক, প্রকল্প ব্যবস্থাপনা ইউনিট ও মূল্য সমন্বয়। এসব অনুষঙ্গের কোনোটিতে ব্যয় বেড়েছে, কোনোটিতে কমেছে। প্রকল্পটির বর্তমান ব্যয় ১৮ হাজার ৩৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে ১৩ হাজার ১১৫ কোটি টাকা এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) ঋণ আর বাংলাদেশ সরকারের বাকি ৪ হাজার ৯১৯ কোটি টাকা। ডিডিপির দ্বিতীয় সংশোধনীতে এডিবির ঋণ ৮ হাজার ৬৫১ কোটি ও বাংলাদেশ সরকারের অংশ ২ হাজার ৭১২ কোটি টাকা নির্ধারণের প্রস্তাব করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে দোহাজারী-কক্সবাজার রেল প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক মো. সুবক্তগীন জানান, ঘুনধুম অংশ বাদ পড়ায় নির্মাণ ব্যয়ে প্রভাব পড়েছে। ফিডিক কন্ট্রাক্টের সমস্ত নিয়ম মেনে ডিপিপি সংশোধনের প্রস্তাব করা হয়েছে। শুরুতে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের মেয়াদ ছিল ২০১৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। এরপর তিন দফায় মেয়াদ বাড়িয়ে চলতি বছরের জুনে প্রকল্পটি শেষ করার জন্য নির্ধারিত ছিল। ডিপিপির দ্বিতীয় সংশোধনীতে এ মেয়াদ আগামী বছরের জুন পর্যন্ত বৃদ্ধির প্রস্তাব দেয়া হয়েছে।
নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata
কক্সবাজার রেল প্রকল্প থেকে বাদ রামু-ঘুমধুম অংশ
- আপলোড সময় : ০৪-১০-২০২৪ ১২:১৩:১৮ পূর্বাহ্ন
- আপডেট সময় : ০৪-১০-২০২৪ ১২:১৩:১৮ পূর্বাহ্ন
কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ